বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনা, গাজীপুরে শোকের ছায়া

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। চলছে শোকের মাতম। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের আহাজারিতে ভাড়ি হয়ে উঠছে গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকার বাতাস। পরিবারের সদস্যরা স্বজনদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বৃহষ্পতিবার (২১ জুলাই) ভোরে হাসিমাখা পরিবেশে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ওইদিন বরিশালের উজিরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গাজীপুর মহানগরের ১১নং কোনাবাড়ী জয়েরটেক এলাকার নিহতদের বাড়িতে এখনো মাতম চলছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন নিহতরা হলেন, উজিরুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমিন (৪২), হাজী জব্বার আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৩), মোহাম্মদ রহা মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম ঠান্ডু (৬০), হাসেন মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান (৪৫), আব্দুর রহমানের ছেলে হারুন অর রশিদ বাদশা (৪০) ও তমিজউদ্দিনের ছেলে হাসান সরকার (৩৬)। কোনাবাড়ি জয়েরটেক এলাকায় একটি খোলা মাঠে সকাল সাড়ে ১০টায় উজিরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছয়জনের জানাজা শেষে পরিবারিক কবরে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত ছয়জনের মরদেহ পাশাপাশি রেখে একই স্থানে দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জয়েরটেক এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিজ উদ্দিন স্বপন বলেন, বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ৯জন পদ্মা সেতু দেখার পরিকল্পনা করে। পরে পরিকল্পনায় কুয়াকাটা ভ্রমণের কর্মসুচীও যোগ করে। তাদের মধ্যে দুই জন দলিল লেখক ও সাতজন ছিলেন ব্যবসায়ী। ওইদিন দুপুরে গণমাধ্যমের সুবাদে দুর্ঘটনাটির সংবাদ শোনতে পান স্থানীয়রা।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তাদের পদ্মা সেতু দেখা শেষ হয়েছিল। পদ্মা সেতু পার হয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেখার উদ্দেশে মাইক্রোবাসযোগে ছুটছিলেন ৯ প্রতিবেশী। কিন্তু এর আগেই বৃহষ্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার নতুন শিকারপুর এলাকায় চাকা পাংচার হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী মোল্লা পরিবহন মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের চার আরোহী ঘটনাস্থলেই মারা যান।
রুহুল আমিন ও হারুন-অর রশীদ সম্পর্কে মামাতো-ফুপাতো ভাই। দুর্ঘটনায় তারা দুজনই মারা যান। নিহত রুহুল আমিনের দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার।স্বামীর শোকে তার স্ত্রী আইরিন আক্তার শোকে ঘরের মধ্যে মাতম করছেন। রুহুল পেশায় দলিল লেখক হলেও বাড়িতে গরু লালন-পালন করতেন। তার সাথে তার স্ত্রীও বাড়ীর গরু দেখাশুনার কাজে সহযোগীতা করতেন।
রুহুল আমিনই ছিলেন সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি। নিহত হারুন-অর রশীদের স্ত্রী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাদের দুই ঘরে ১২ বছরের ছেলে ফাহিম এবং পাঁচ বছরের ছেলে মাহিম মা’র দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু ভাবছেন কি বলে তার মা’কে সান্তনা দিবেন। হারুনের বৃদ্ধ মা ছেলের জন্য বার বার আহাজারি করে বলছে আমার বাবারে তোরো এনে দে। আমার বাবা আমারে না বলে কই গেলো। বাড়ির পাশে দুই ভাইকে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়।
স্বজনেরা জানায় দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে অসুস্থ থাকবস্থায় হারুন বিকেল ৪টায় তার মা হাসনা বেগমকে ফোন করে বলে ‘মা’ আমি ভাল আছি। তুমি আমার জন্য দোয়া কইরো। আমার ছোট দুই সন্তানকে ভালভাবে দেখে রেখো। শান্তাকে (স্ত্রী) বাইলো আমার জন্য দোয়া করার জন্য। এসব কখা বলার কিছুক্ষন পরই ছেলে হারুনের মৃত্যুর খবর আসে তার মা’র কাছে।
নিহত জালাল উদ্দিন ঠান্ডুর (৬০) স্ত্রী রোকেয়া বেগম জানান, বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল ১০টায় স্বামী ঠান্ডুর সাথে তার শেষ কথা হয়। তখন তারা পদ্মা সেতুর কাছাকাছি ছিলো। এর দুই ঘন্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় তার মেয়ে তাকে দুর্ঘটনার দেন। তার মৃত্যুর খবরে মা করদজান, স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনেরা বার বার বিলাপ করছেন।
বরিশালের উজিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম জানান, হতাহতরা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা যাওয়ার পথে উজিরপুরের বরিশাল রোডে মাইক্রোবাসটির চাকা পাংচার হলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে বিপরীত দিক থেকে আসা মোল্লা পরিবহন নামে একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মাইক্রোবাসের সবাই আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেিেডক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য ক্লিনিকগুলোতে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা যান।